ভাগ্য বদলের আশায় একসময় দুবাই গিয়েছিলেন। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক যুগ চাকরি করেছেন। আয়রোজগারও ভালো ছিল। কিন্তু করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর দেশে এসে আটকে পড়েন। এ সময় প্রবাসের চাকরিটাও চলে যায় তাঁর। বছরখানেক বেকার ছিলেন। এরপর নিজ গ্রামেই প্লাস্টিকের ফাইবার দিয়ে মোটরসাইকেল সাজসজ্জার (ডেকোরেশন) বিভিন্ন পণ্য তৈরির কারখানা দেন। প্রথমে ভালো আয় হয়নি। কিন্তু বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের নানা প্রান্তে সরবরাহ করে ভালো লাভ হচ্ছে তাঁর। তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা।
এই গল্প মো. আল-আমিন হাওলাদারের। বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের চর বলইকাঠি গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আলাউদ্দিন হাওলাদারের ছেলে।
আল-আমিনের চার ভাইবোনের মধ্যে দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট ভাই রুবেল প্রবাসী। লেখাপড়ায় প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি আল-আমিন। লেখাপড়ায় মন না থাকায় ঢাকার শ্যামপুর এলাকায় একটি কারখানায় কাজ করার জন্য পাঠানো হয় তাঁকে। সেটাও ছিল মোটরসাইকেলের সাজসজ্জার পণ্য তৈরির কারখানা। প্রায় দুই বছর সেখানে কাজ করেন তিনি। সেখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি তাঁর কারখানাটি চালু করেন।
আল-আমিনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৮ সালে আল-আমিন দুবাই চলে যান। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজ করে ভালোই দিন কাটছিল তাঁর। ২০২০ সালে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন আল-আমিন। এরপর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশেই আটকে পড়েন। একপর্যায়ে দুবাই যোগাযোগ করলে সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁর চাকরিটি নেই। এতে বেকার হয়ে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। ২০২১ সালের শেষ দিকে আল-আমিন তাঁর কারখানা চালু করেন।
পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে চর বলইকাঠি গ্রাম। কয়েক দিন আগে সেখানে সরেজমিনে দেখা যায়, একটি ছোট্ট ঘরে কারখানার কার্যক্রম চলছে। আল-আমিন নাক-মুখ ঢেকে সাজসজ্জার বিভিন্ন পণ্য তৈরির কাজে ব্যস্ত। তাঁর সঙ্গে কাজ করছেন কয়েকজন কর্মচারী।
‘মেসার্স মা-বাবার দোয়া ফাইবার গ্লাস’ নামের এই প্রতিষ্ঠানটিতে এখন চারজন কাজ করছেন। এদের মধ্যে একজনের নাম মো. জাবের।
এলাকারা বাসিন্দা আবদুল মান্নান জানান, ফাইবার দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্য পাইকারি ও খুচরা কিনে নিতে এখন অনেকেই গ্রামের এই কারখানায় আসছেন। এই অজপাড়াগাঁয়ের কারখানাটি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে।
ব্যবসা থেকে আয় কেমন, এই প্রশ্নের জবাবে আল-আমিন বলেন, প্রথমে একজন কর্মচারী দিয়ে কারখানা শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু ক্রয়াদেশ বাড়ায় এখন তাঁর এখানে চারজন কাজ করছেন। এলাকার বেশ কয়েকজন বেকার যুবক কাজ শিখতেও এখানে আসছেন। বর্তমানে তিনি মাসে গড়ে ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা আয় করছেন।
Leave a Reply